বর্তমান টেকনোলজি যতটা উন্নত ঠিক ততটাই প্রতিযোগীতামূলক। প্রতিযোগীতামূলক মোবাইল বাজারে মোবাইল কোম্পানীগুলোও তাদের উৎপাদনকৃত মোবাইলে যুক্ত করছে আকর্ষণীয় সব ফিচার। আর মার্কেটিং-এর সময় হাইলাইট করে থাকেন সেইসব ফিচার গুলো এর মধ্যে ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট একটি অন্যতম ফিচার। ডিসপ্লে রিফ্রেশরেট অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। কেননা, আপনি যদি আপনার মোবাইল স্ক্রিনের ছবিগুলো স্মুথ না দেখতে পারেন তাহলে ফোনে যতই র্যাম-রম বেশি থাকুক না কেন, আপনার নিশ্চয় ফোনটি ব্যবহার করতে ভাল লাগবে না? আর আপনি যদি একজন গেমার হয়ে থাকেন, তাহলে তো আপনাকে অবশ্যই মোবাইলের ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট সম্পর্কে জানা উচিত।
ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট কি?
আমরা যখন মোবাইল ব্যবহার করি বা আমাদের মোবাইল যখন চালু থাকে তখন কিন্তু আমাদের মোবাইলের স্ক্রিন স্থির বসে থাকে না, সার্বক্ষণিক স্ক্রিন পরিবর্তন হতে থাকে। যখন কোন অ্যাপ ওপেন করি, স্ক্রল করি বা যায়ই করি না কেন, স্ক্রিন পরিবর্তন হয়। তাইনা? এই পরিবর্তনে স্পিডকেই মূলত ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট বলে। অর্থাৎ, স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট বলতে কত দ্রুত আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে স্মুথ ছবি লোড হয়। কেননা, যখন মোবাইলের স্ক্রিন পরিবর্তন হয় তখন স্ক্রিনের পিক্সেল গুলোকে আপডেট বা রিফ্রেশ হতে হয়। একটু ভালভাবে বুঝতে একটা উধারণ দেই, যেমন, যদি কোন ভিডিওর কথা বলি, আমরা সবাই জানি যে, একটি ভিডিও অসংখ্য স্থীর ছবির চলমান অবস্থা তাইনা? আর আমরা যখন কোন ভিডিও প্লে করি তখন স্থীর ছবি গুলো একটা নির্দিষ্ট গতিতে পরিবর্তন হতে থাকে এবং তা এত দ্রুত পরিবর্তন হয় যে, আমরা স্থীর ছবিগুলো ভিডিও আকারে দেখি। ঠিক তেমনি আমরা যখন মোবাইল ব্যবহার করি, তখন আমাদের মোবাইলের ডিসপ্লে একটা নির্দিষ্ট গতিতে পরিবর্তন হয় এবং পিক্সেল/ফ্রেম বা ছবি লোড হয় বা রিফ্রেশ হয়। আর এটাকেই রিফ্রেশ রেট বলে। ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট এর এককে হার্জ হিসেবে গননা করা হয়। যেমন ধরুন, মোবাইলের ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট বর্ণনা করতে বলা হয় ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ (120Hz)। এর অর্থ হল প্রতি সেকেণ্ডে মোবাইলে স্ক্রিন ১২০ বার রিফ্রেশ হয়। আর রিফ্রেশ রেট যত বেশি হবে মোবাইলের স্ক্রিনে কোন চিত্র তত স্মুথ দেখতে পাবেন।
ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট এর প্রকারভেদ
বর্তমানে সাধারণত মোবাইলের ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট চার ধরনের । এগুলো যথাক্রমে ৬০ হার্জ (60Hz), ৯০ হার্জ (90Hz), ১২০ হার্জ (120Hz) ও ১৪৪ হার্জ (144Hz)
- ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ৬০ হার্জ (60Hz) মানে প্রতি সেকেণ্ডে ৬০ বার স্ক্রিন আপডেড বা রিফ্রেশ হয়।
- ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ৯০ হার্জ (90Hz) মানে প্রতি সেকেণ্ডে ৯০ বার স্ক্রিন আপডেড বা রিফ্রেশ হয়।
- ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ (120Hz) মানে প্রতি সেকেণ্ডে ১২০ বার স্ক্রিন আপডেড বা রিফ্রেশ হয়।
- ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ১৪৪ হার্জ (144Hz) মানে প্রতি সেকেণ্ডে ১৪৪ বার স্ক্রিন আপডেড বা রিফ্রেশ হয়।
স্ক্রীন যত দ্রুত যতবেশি বার আপডেট বা রিফ্রেশ হবে ব্যবহারকারী স্ক্রিনে ছবি ততই এবং ক্লিয়ার দেখতে পাবেন। অর্থাৎ ১২০ হার্জ (120Hz) রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লেতে সবয়েচে স্মুথ ছবি দেখা যায়। আপনি যদি ৬০ হার্জ (60Hz)রিফ্রেশ রেটের মোবাইল ব্যবহার করার পর ৯০ হার্জ (90Hz) বা ১২০ হার্জ (120Hz) রিফ্রেশ রেট-এর কোন মোবাইল ব্যবহার করেন তাহলে আপনি পরিবর্তনটুকু বুঝতে পারবেন।
ভিডিও গেম খেলার জন্য হাই ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট দরকার?
আগেই বলেছি, আপনার ফোনের ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট যত বেশি হবে, ডিসপ্লেতে যেকোনো স্ক্রীন তত স্মুথ দেখতে পারবেন। ভিডিও গেম খেলার জন্য তো অবশ্যই হাই রিফ্রেশ রেট দরকার ,যদি আপনি ভিডিও গেমের সর্বোচ্চ এক্সপেরিয়েন্স পেতে চান ।কেননা ,১২০ হার্জ (120Hz) ডিসপ্লে এর ফোনে যত দ্রুত স্ক্রিন পরিবর্তন হতে পারে ৬০ হার্জ (60Hz) ডিসপ্লের ফোন অবশ্যই অত দ্রুত হবে না।
তবে ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট মূলত নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। আপনি যদি কোনো ভারী সফটওয়্যার ব্যবহার করেন মানে অধিক গ্রাফিক্যাল মোশন আছে এমন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং আপনার ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট কম হয় তাহলে ডিসপ্লের আউটপুট একটু তারতম্য হয়। কিন্তু আপনি যদি হাই ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট এর কোন ফোনে বাড়ির সফটওয়্যার ব্যবহার করেন তাহলে ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট এর আউটপুটে কোন সমস্যা হবে না এবং আপনি স্ক্রিনে সবকিছু স্মুথ এবং ঝকঝকে দেখতে পারবেন। তাছাড়া আরেকটা বিষয় বেশিরভাগ ভিডিও গেম গুলি মূলত১২০ হার্জ (120Hz) বা তার বেশি স্ক্রীন রিফ্রেশ রেট মোবাইলে চালানোর জন্যই তৈরি করা হয়।
আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট কি? এবং ভিডিও গেম খেলার জন্য স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। সুতরাং আপনি যদি ভিডিও গেম খেলার জন্য মোবাইল ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই মোবাইলের প্রসেসর, র্যাম-রম পাশাপাশি ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট দেখে কিনবেন।