জন্ম নিবন্ধন যাচাই, অনলাইন কপি ডাউনলোড এবং সংশোধন করার উপায় ২০২৪

বর্তমান সময় আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সনদপত্র হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র। যা আমাদের দেশে বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিকের থাকা বাধ্যতামূলক। এই জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র তৈরী করতে আমাদের যেতে হয় নিজ নিজ পৌরসভা ও ইউনিয়নে।

আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাস করি, আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র অবশ্যই থাকতে হবে। আমরা যদি এই জন্ম সনদপত্র না করে থাকি তাহলে, আমরা আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকবো। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের জন্ম সনদপত্র থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে।

বর্তমানে আমাদের এই অনলাইন যুগে আমরা এখন ঘরে বসে নানা কাজ করতে পারি। আমরা ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন,আমাদের জন্ম নিবন্ধন যাচাই, জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড সহ যাবতীয় কাজ এখন আমরা আমাদের ঘরে বসেই করতে পারি। এই কাজ গুলো করতে আপনাকে কোনো রকম ঝামেলায় পড়তে হবে না, আপনি খুব সহজেই এখন অনলাইনের মাধ্যমে আপনার বাসায় বসে  জন্ম নিবন্ধন যাচাই, জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড ও সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আজকে আপনারা আমাদের আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা, জন্ম নিবন্ধের অনলাইন কপি ডাউনলোড এবং জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার উপায় সম্পর্কে।

জন্ম-নিবন্ধন-যাচাই
জন্ম-নিবন্ধন-যাচাই

জন্ম নিবন্ধন যাচাই

আপনি আপনার ঘরে বসে থেকে অনলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই  জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। তবে এই কাজটি করতে গেলে আপনার দরকার হবে জন্ম তারিখ, ও জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্রের ১৭ ডিজিটের এক বিশেষ নাম্বার।

আপনি যদি এই দু’টি বিষয়ে পুরোপুরি ভাবে জেনে থাকেন, তাহলে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। আর এই কাজটি করার জন্য আপনি ভিজিট করুন এই লিংকে https://everify.bdris.gov.bd/

এই লিংকে যাওয়ার পর আপনি প্রথমে যে ফাঁকা ঘর টি পাবেন সেখানে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্রের ১৭ ডিজিটের যে নম্বরটা দেওয়া আছে, সেটি এই ফাঁকা ঘরে বসিয়ে দেবেন। এবং নিচে যেই ঘরটি দেখবেন সেখানে আপনি আপনার জন্ম তারিখ সঠিক মতো বসিয়ে দিন।

এবার আপনাকে একটি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে। আর এই ক্যাপচাটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি গণিত স্টাইলের একটি ক্যাপচা হয়ে থাকে। সেটিকে সঠিকভাবে গণিত করার মধ্য ‍দিয়ে বসিয়ে দিন। তারপরে সার্চ অপশনে ক্লিক করার মধ্য দিয়ে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে সক্ষম হবেন।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই, অনলাইন কপি ডাউনলোড এবং সংশোধন করার উপায় ২০২২ ।

 

জন্ম নিবন্ধন যাচাই, অনলাইন কপি ডাউনলোড এবং সংশোধন করার উপায় ২০২২ ।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার ক্ষেত্রে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে অনেকের জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র ১৬ ডিজিটের নাম্বার হয়ে থাকে। যাদের এই জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র নাম্বার ১৬ ডিজিটের রয়েছে, তারা হয়তো এখানে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন না।

তাদের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি রয়েছে সেটি হচ্ছে, তাদের সেই জন্ম নিবন্ধনে থাকা ১৬ ডিজিটের নম্বর টিকে ১৭ ডিজিটের পরিণত করতে হবে। আর এই ১৭ ডিজিটে পরিণত করতে গেলে, আপনার ব্যবহৃত ১৬ ডিজিটের নম্বরের শেষের ৫ ডিজিটের পূর্বে একটি (০)  শূন্য যোগ করতে হবে।

অথবা প্রথম থেকে নম্বরটি গুনতে শুরু করলে ১১ ডিজিটের পর একটি শূন্য (০) যোগ করে ১৭ ডিজিট করে নিতে হবে। জন্ম সনদ পত্রের এই ১৭ ডিজিটের মধ্যে প্রথম ৪ ডিজিট ব্যক্তির জন্ম সাল হয়ে থাকে। এবং পরবর্তী ৬ ডিজিট ব্যক্তিগত পরিচিত নম্বর হয়ে থাকে।

উপরের কাজটি করার পরেও আপনি যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র টিকে অনলাইনে খুঁজে না পান, তাহলে এটি না পাওয়ার ২টি কারণ রয়েছে।

 

১ম কারণ হলো: আপনার জন্ম নিবন্ধন হাতে লেখা কার্ডটি অনলাইন ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে এই রকম সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয়।

 

২য় কারণ হলো: হয়তো আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর টি ভুল আছে, বা আপনার জন্ম তারিখ ভুল থাকতে পারে। এছাড়াও যদি আপনার জন্ম তারিখের সাথে জন্ম সনদ নম্বরের গরমিল থাকে তাহলে এই সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয়।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কপি ডাউনলোড করার উপায়

আপনি জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে গেলে উপরের নির্দেশনা খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করে কাজ করতে হবে। আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রটি যদি আপনি উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ ভাবে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনি জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার সক্ষম হলে আপনার জন্ম নিবন্ধনটি ডিজিটালের আওতায় হয়ে থাকবে। আপনি যখন আপনার জন্ম নিবন্ধনটিকে খুঁজে পাবেন তখন সেটির অনলাইন কপি ডাউনলোড করার জন্য, আপনাকে আপনার কম্পিউটার থেকে ( Ctrl + P) প্রেস করে প্রিন্ট কমান্ড দিয়ে, পিডিএফ ফাইল সিলেক্ট করে নিয়ে, পিডিএফ ফাইল হিসেবে সেভ করে নিতে পারেন।

এবার আপনি আপনার কম্পিউটারে সরাসরি প্রিন্টারের লাইন কানেক্ট করে নিয়ে সেই ফাইলটি কে খুব ভালোভাবে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এবং ভবিষ্যতের জন্য আপনি এটিকে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার উপায়

আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনি খুব ভালোভাবে পড়তে থাকেন আমাদের আলোচনা অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনি খুব ভালোভাবে আপনার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে সক্ষম হয়ে থাকবেন। আপনার সেই জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার পরে যদি আপনি লক্ষ্য করে থাকেন যে আপনার জন্ম নিবন্ধনে কোন রকম তথ্য ভুল রয়েছে, তাহলে তো অবশ্যই আপনাকে তা সংশোধন করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রে ভুল থাকলে তা একটি বিশেষ সমস্যা হয়ে থাকে। এবং আপনার জীবনের নানা কাজকর্ম এটি এক ধরনের বিশেষ অসুবিধা সৃষ্টি করে থাকে। আর তাই এটিকে সংশোধন করার জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে।

বর্তমান সময়ে জন্ম সনদ সংশোধন করা অনেক জটিল এবং একটু কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য অনলাইনে অবশ্যই আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য আপনি এখানে ক্লিক করুন।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে। জন্ম সনদ সংশোধন প্রকারভেদে ফি এর ধরন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ফি গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

 

  • তথ্য সংশোধনের জন্য ফি ১০০ টাকা হয়ে থাকে।
  • জন্ম তারিখসহ ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি অন্যান্য সংশোধনের জন্য ফি ৫০ টাকা হয়ে থাকে।

আপনি যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনি অনুমোদন পেয়ে যাবেন। এই জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আপনার টিকার কার্ড, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয় পত্র, টিআইএন সার্টিফিকেট এসব কাগজপত্র সাবমিট করার জন্য প্রয়োজন হয়ে থাকে।

এবার আপনি যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র পিতা মাতার নাম সংশোধন করতে যান তাহলে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে তা করতে হবে। আপনার পিতা-মাতার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্র রয়েছে প্রথমে লক্ষ্য করতে হবে তা সঠিক আছে কিনা।

যদি সঠিক থাকে তাহলে তা আপনার জন্য অনেক ভালো একটি সুযোগ হয়ে থাকবে, আর যদি সঠিক না হয়ে থাকে তবে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার জন্ম নিবন্ধন করার সময় অবশ্যই আপনার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্রের নম্বর দেয়ার প্রয়োজন পড়েছিল।

আর তাই আপনার জন্ম সনদে সংশোধিত নাম দেখাবে এবং সেই জন্ম সনদ ফি পুনর্মুদ্রণ করার আবেদন করে পুনর্মুদ্রণ করে নিলেই হবে। যদি আপনার জন্ম নিবন্ধনে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধন এর সাথে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন এর ম্যাপ করতে হবে। ম্যাপ করার পর জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রণ করে নিতে পারেন।

আপনার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র যদি না থাকে তাহলে আপনাকে দুই ধরনের আবেদনের সম্মুখীন হতে হবে। তারা যদি বেঁচে থাকে তাহলে আবেদনপত্রটি হবে এক ধরনের এবং তারা যদি বেঁচে না থাকে তাহলে আবেদনপত্রটি হবে আর এক ধরনের। এই দুই ধরন নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. পিতা মাতা বেঁচে থাকলে

আপনার পিতা-মাতার যদি বেঁচে থাকে এবং বেঁচে থাকার পরেও যদি তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র করা না থাকে, তাহলে জরুরিভাবে অবশ্যই তাদের আগের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর এর সাথে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর তখন ম্যাপ করার প্রয়োজন হবে। ম্যাপ করার পর আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে পিতা-মাতার সংশোধিত নাম দেখা যাবে।

২. পিতা মাতা বেঁচে না থাকলে

আপনার পিতা-মাতার যদি বেঁচে না থাকে, এবং তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র যদি করা না থাকে তাহলে আপনার জন্ম তারিখ ০১-০১-২০০০ এর পর হয় তখন সরাসরি আপনি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে আপনার পিতা মাতার নাম সংশোধন করে নিতে পারবেন। তবে এই কাজটি করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে পিতা-মাতার মৃত্যুর প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।

তবে এই ধরনের আবেদন সমূহের জন্য সরাসরি অনলাইনে আবেদন করা এখন আপাতত বন্ধ আছে। আর তাই এই ধরনের আবেদন করার জন্য আপনাকে সরাসরি আপনার এলাকার নিবন্ধকের কার্যালয়ে যেয়ে আবেদন করতে হবে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার পর আপনি আগে পুরোপুরি ভাবে একমত হয়ে নিন এটিকে সংশোধন করার বিষয়ে। আপনি যদি জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে না পারেন তাহলে কেনো যাচাই করতে পারছেন না তার সঠিক কারণ আপনাকে খুঁজে বার করতে হবে। আমাদের সবার উচিত হয়ে থাকে পিতা মাতা সহ পরিবারে আরো সদস্যদের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে দেখা।

আর যদি আপনি কোনো কারণবশত তা করতে না পারেন তাহলে আপনার এলাকার নির্দিষ্ট কতৃপক্ষের সাহায্য নিতে পারেন।

শেষ কথা

বর্তমান সময় আমাদের এই অনলাইন যুগে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা অত্যন্ত সহজ একটি প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সনদের যাবতীয় কার্যক্রম এখন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

আমাদের আলোচিত উপরের নির্দেশনা গুলো আপনি ভালোভাবে পড়ার মধ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই সহ জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি এবং জন্ম সনদপত্র খুব সহজেই সংশোধন করতে পারবেন।

আজকে আমাদের লিখা আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার পছন্দমত যেকোনো একটি সাইটে একবার শেয়ার করবেন। আপনার করা একটি শেয়ার আমাদেরকে আরো ভালো আর্টিকেল লিখতে উৎসাহিত করবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top