মেকআপ পছন্দ করে না দুনিয়াতে হয়তো এরকম মেয়ে খুব কমই রয়েছে। কমবেশি সব মেয়েরাই পছন্দ করে নিজেদের কে আরো সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে তুলতে। নিজের চেহারাকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য মেকআপ এর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু শুধু মেকআপ করতে পছন্দ করলেই হবেনা মেকআপ কিভাবে করতে হয় তার নিয়ম ও জানতে হবে। তাই আমি আজ আপনাদের সামনে হাজির হলাম ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম নিয়ে। সাজগোজ করতে আমরা মোটামুটি সবাই পছন্দ করি কিন্তু সাজগোজ করার নিয়ম আমরা কয়জনই বা জানি। তাই যারা ইচ্ছে থাকা সত্বেও বাসায় বসে কিভাবে মেকআপ করতে হয় তা জানি না আজকের এই আর্টিকেলটি মূলত তাদের জন্য।
আমরা অনেকে জানি ই না যে ঘরে বসে মেকআপ তৈরি করা যায় এবং নিজের চেহারাকে একটি পারফেক্ট-মেক আপ লুক দেয়া যায়। আবার এমন ও অনেকে রয়েছে যারা মেকআপ করার জিনিসের নাম গুলো ও ঠিকমত জানেনা। তাই তাদের জন্যই আজকে আমি ঘরে বসে পার্লারের মতো সাজ কিভাবে দেয়া যায় বিভিন্ন মেকআপ করার জিনিসের নাম ও দাম সম্পর্কে লিখতে চলেছি। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা শুরু করা যাক।
ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম
ঘরে বসে মেকআপ করার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো ফলো করলে আপনি খুব সহজেই পার্লারের মত পারফেক্ট মেকআপ লুক বাসায় বসেই করে ফেলতে পারবেন। তবে মেকআপ করার আগে আপনাকে অবশ্যই মেকআপ করার জিনিসের নাম ও দাম সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কোন মেকআপ এর নাম কি এবং এর ব্যবহার কিভাবে করতে হয় এগুলো যদি আপনি ভালভাবে আয়ত্ত নিয়ে আসতে পারেন তাহলে আপনি খুব সহজেই মেকআপ করার নিয়ম বুঝে যাবেন। সঠিক নিয়ম ফলো করে যদি আপনি মেকআপ না করেন তাহলে আপনার নিজের কাছেই বড় হবে আপনি মুখে একগাদা আটা ময়দা মেখে রেখেছেন শুধু। তাই মেকআপ করার পূর্বে অবশ্যই মেকআপ করার পদ্ধতি জেনে নিতে হবে যাতে এগুলো মুখে ইউজ করার পর আরো প্রাকৃতিক মনে না হয়।
মেকআপ করার জিনিসের নাম
মেকআপ করার পূর্বে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে নিচের দেয়া এই সবগুলো জিনিস আপনার কাছে রয়েছে। মেকআপ করার এই জিনিসগুলো যদি আপনার কাছে না থাকে তাহলে আপনি কখনোই মুখে একটি পার্ফেক্ট লুক আনতে পারবেন না। চলুন দেখে নেওয়া যাক মেকআপ করার জন্য আমাদের কি কি লাগবে।
- ফেসওয়াশ
- ময়েশ্চারাইজাৱ
- প্রাইমার
- ফাউন্ডেশন
- কনসিলার
- টোনার
- ফেস পাউডার
- ব্ল্যাশ
- হাইলাইটার
- আইশ্যাডো
- আইলাইনার
- কাজল
- মাশকারা
- লিপলাইনার
- লিপস্টিক
- মেকাপ সেটিং স্প্রে
- মেকআপ রিমুভার
চলুন এবার একে একে এই সবগুলো মেকআপ করার জিনিসের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মেকআপ করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে আপনার ফেস টি স্ক্রাবিং এবং ক্লিনজার এর মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক ফেস মেকআপ করার পদ্ধতি
মুখের মেকআপ করার নিয়ম
মেকআপ করার শুরুতেই আপনাকে আপনার ফেস ভালোভাবে তৈরি করে দিতে হবে। ফেস মেকআপ প্রথমে করে ফেলল এরপর আই মেকআপ অলিভ মেকআপ করা সহজ হয়ে যায়। ফেস মেকআপ করার জন্য প্রথমেই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে প্রাইমারি। প্রাইমার মূলত আপনার ত্বকে মেকআপ এর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি ব্যবহারের ফলে আপনার মুখে একটি অন্যরকম উজ্জলতা সৃষ্টি হবে। অল্প পরিমাণের কিছু প্রাইমার হাতে নিয়ে পুরো মুখ জুড়ে তা আঙ্গুল দিয়ে মাসাজ করুন এবং একইসাথে ঘাড় ও কপালেও করুন। প্রাইমার ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক এবং মেকআপ এর মধ্যে একটি লেয়ার সৃষ্টি হবে।
প্রাইমার দেয়া হয়ে গেলে এবার আপনাকে কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। মূলত যাদের চোখের নিচে অনেক বেশি ডার্ক সার্কেল রয়েছে তাদের জন্য কনসিলার অনেক প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কনসিলার ব্যবহারের নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি সহজেই আপনার মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করতে পারবেন। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য কিছু পরিমাণ কনসিলার সেখানে লাগিয়ে ব্রাশ বা স্পঞ্জ দিয়ে তা ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। এছাড়াও আপনার মুখে যদি ছোপ ছোপ দাগ অথবা নাকের চারপাশে যদি লাল লাল দাগ থেকে থাকে তাহলে কনসিলার এর মাধ্যমে তা ঢেকে নিতে পারেন।
কনসিলার লাগানোর পর এবার আপনাকে ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। ফাউন্ডেশন দেয়ার নিয়ম হল ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য কিছু পরিমাণ ফাউন্ডেশন হাতে নিয়ে তার মুখে লাগিয়ে নিন এরপর ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে তা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। ফাউন্ডেশন মেকআপ এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। ফাউন্ডেশন ছাড়া মেকআপ এর কথা ভাবাই যায় না। এরপর ফেস পাউডার লাগিয়ে ফাউন্ডেশনটি সেট করে নিন।
এরপর যেটি করতে হবে তা হচ্ছে হাইলাইটিং করা অর্থাৎ নাচ এবং চোয়ালের হাড়ে ও কপালের মাছ বরাবর হাইলাইটার লাগিয়ে তা ব্রাশ করে নিতে হবে ঠোটে হালকা হাইলাইটার ব্যবহার করুন। হাইলাইটার ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বকে আলোছায়া সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ আপনার মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য।
আই মেকআপ করার নিয়ম
চোখের মেকআপ করার পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে আপনি আপনার চোখকে আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। আই মেকআপ করতে হলো প্রথমে আপনাকে আই ভ্রু ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে বুকে আরো সুঠাম করা যায়। আইব্রু ব্যবহারের আগে ব্রু লাইন ক্লিয়ার করার জন্য কনসিলার ব্যবহার করুন। তারপর আপনার ত্বকের রঙ এবং আপনার পোশাকের রঙ অনুযায়ী আই শ্যাডোর কালার নির্বাচন করুন। যেকোনো দুটি রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। তারপর আইলাইনার ও কাজল লাগিয়ে নিন। সঠিকভাবে আলভারও কাচের ব্যবহার করা হলে তা চোখের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এরপর চোখের পাপড়ি বড় ও ঘন করার জন্য মাসকারা ব্যবহার করুন।
লিপ মেকআপ করার নিয়ম
ঠোঁটের সঠিক শেইপ আনার জন্য প্রথমে লিপলাইনার ব্যবহার করুন। লিপলাইনার দিয়ে আগে ঠোঁটের চারপাশে একটি শেইপ এঁকে নিন। তারপর পছন্দসই একটি ডার্ক কালারের লিপস্টিক ব্যবহার করুন। লিপস্টিক ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ঠোঁটের মাঝখানে থেকে লিপস্টিক দেওয়া শুরু করুন। লিপস্টিকে যদি হালকা ম্যাচ ফিল আনতে চান তাহলে ঠোঁটে হালকা পাউডার ব্রাশ করুন। এরপর সর্বশেষ মেকআপ টিপস হচ্ছে মেকআপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করা। এটি আপনার মেকআপ কে ভালোভাবে আপনার ফেসে বসার জন্য সাহায্য করবে।
উপসংহার
সারাদিন মেকআপ লুক নিয়ে ঘুরে দিন শেষে রাতে ঘুমাবার আগে মেকআপ রিমুভ করতে আবার ভুলে যেয়েন না। মেকআপ রিমুভ করার জন্য কখনোই সাবান অথবা হুইল পাউডার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ এতে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে খাড় যা আপনার ত্বককে খসখসে বানিয়ে তুলবে এছাড়া অনেক স্কিন ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মেকআপ রিমুভ করার জন্য বাজারে অনেক রিমুভার পাওয়া যায় সেগুলো ইউজ করে প্রথমে মেকআপ টা ভালোভাবে টিসু দিয়ে রিমুভ করবেন তারপর ফেসওয়াশ অথবা ক্লিনজার ব্যবহার করে মুখ ক্লিন করে নিবেন। ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এবার আপনিও চাইলে ঘরে বসে পার্লারের মতো সাজ করতে পারবেন খুব সহজেই। আজকের মতো এই আর্টিকেল এখানেই শেষ করছি। আবারো অন্য কোন আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে খুব শীঘ্রই হাজির হব। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।