ডিপ্রেশন আমাদের সবার জন্য একটি পরিচিত শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বর্তমানে আমাদের আশেপাশে অনেক জনকেই সহসাই ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখা যায়। ডায়াবেটিস যেমন আমাদের জন্য খুব সাধারন একটি রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিপ্রেশন ঠিক তেমন একটি স্বাভাবিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানব মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ডিপ্রেশন কি আসলে এ রোগ? হ্যাঁ ডিপ্রেশন একটি মানসিক ব্যাধি। এই ডিপ্রেশন নামক মানসিক অশান্তিতর দিকে বেশিরভাগ ঝুঁকছে আমাদের তরুণ সমাজ।আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা পেয়ে যাবেন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় ।
আরও পড়ুনঃ
ডিপ্রেশন কি?
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির পাওয়ার উপায় জানার আগে আমাদের এটা জানা উচিত ডিপ্রেশন আসলে কি? ডিপ্রেশন আসলে মনের অস্থিরতা। ডিপ্রেশন ব্যাপারটি মেজাজ ও চিন্তার সাথে ওথপ্রোথভাবে জড়িত। তবে কিছুসময়ের মন খারাপ বা সামান্য বিষণ্ণতাকে ডিপ্রেশন বলা যায় না। এটি সচরাচর প্রায় সবার ক্ষেত্রে ঘটে। পুরো বিষয়টিকে সহজ একটি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হলে তাহলে দাড়ায় ডিপ্রেশন একটি মানসিক ব্যাধি।
ডিপ্রেশন ব্যাপারটিকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হলে তিনটি জিনিসের উপর প্রকাশ করা প্রয়োজন। বিষয় তিনটি হচ্ছে স্মৃতি স্বপ্ন এবং হবি বা শখ। মানুষ ডিপ্রেশনে বুকে আয় প্রথম দুটি কারণে এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় রয়েছে তৃতীয় বিষয়টিতে। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ ডিপ্রেশনের বলে অতীতের স্মৃতিগুলো মনে করে করে এবং নিজের স্বপ্ন ভঙ্গের কারণে এবং একজন ডিপ্রেশন কত মানুষ যদি তার স্বপ্নকে লক্ষ বানিয়ে এই এসেছে থাকে তাহলে ডিপ্রেশন তার মধ্যে বেশি দিন স্থায়ী হবে না।
ডিপ্রেশন থেকে যত দ্রুত সম্ভব উত্তোলনের চেষ্টা করা উচিত। ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় রয়েছে।
- নিজেকে ব্যস্ত রাখা
নিজেকে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির সবথেকে বড় উপায়। কেউ যখন নিজেকে ব্যস্ত রাখে তখন সে কাজের চাপে নিজের মন খারাপের কারণটাই ভুলে যায়। অর্থাৎ আপনি যদি একজন ডিপ্রেশনগ্রস্থ মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসা প্রধান হাতিয়ার হবে নিজের পছন্দের কাজগুলোতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলা। তখন আপনার হাজারো ভালোলাগার ভিড়ে জমাট বাঁধা কষ্টগুলো গলে যেতে বাধ্য।
- নিজের একটি লক্ষ্য ঠিক করা
একজন ডিপ্রেশন গ্রস্ত মানুষকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনার অন্যতম একটি হাতিয়ার হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো লক্ষ্য রয়েছে। যদি লক্ষ নাও থেকে থাকে তারপরেও একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য গড়ে তোলা উচিত। তবে এমন ভাবে লক্ষ্য স্থির করতে হবে যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন । অর্থাৎ বাস্তবভিত্তিক লক্ষ্য স্থির করতে হবে যা আপনার শখ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আপনি আপনার ডিপ্রেশনকে সহজে অতিক্রম করতে পারবেন।
- বন্ধু বা কাছের মানুষদের সময় দেওয়া
আপনি আপনার সকল দুঃখ কষ্ট সবচেয়ে বেশি বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারবেন। আমাদের বন্ধু মহলে এমন কিছু বন্ধু রয়েছে যাদের কাছে মন খারাপ করে থাকাই যায়না। তাদের খুনসুটি মনকে প্রশান্ত করে দিতে যথেষ্ট। শুধু বন্ধু নয় আপনার পরিবারের লোকজনের কাছে নিজেকে মেলে ধরুন। নিজের আসে পাশের এমন সবাইকে খোঁজে বের করুন যারা এতদিন আপনার খুব কাছাকাছি থাকা সত্বেও আপনার নজরের বাইরে ছিল।
- ব্যায়াম করা বা শারীরিক পরিশ্রম করা
ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্য উপকারী তা কিন্তু নয়। ব্যায়াম আমাদের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে যার ফলে ডিপ্রেশন নামক ব্যাধিটি আপনাকে সহজে কাবু করতে পারে নাহ।আমাদের শরীর ও মন পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত । তাই আমাদের মনকে ভাল রাখতে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হবে। এজন্য আমাদের দরকার উপযুক্ত মেডিটেশন বা শরীরচর্চামূলক কাজ করা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন শরীরচর্চার ফলে যে হরমোনগুলোর নিঃসরণ ঘটে এগুলো আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে এন্ড্রোফিন হরমোন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব ঘটলে আমরা খুব সহজে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়ে । অর্থাৎ পুষ্টির অভাবে আমাদের শরীরে হরমোন গুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় যা ডিপ্রেশনকে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে উপযোগী করে দেয়। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য সুষম বা পুষ্টিকর খাদ্য অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য খাবারের নাম না বললেই নয়।
এর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে আপেল। বিশেষজ্ঞরা বলেন ডিপ্রেশন কাটাতে প্রতিদিন একটা করে আপেল খাওয়া উচিত। আপেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ কোষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মনমেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
প্রত্তোহিক খাবারের তালিকায় শাকসবজি অবশ্যই রাখা উচিত।সবুজ শাকসবজি মস্তিষ্কের কোষের উন্নতি ঘটায় এবং ডিপ্রেশনে প্রতিষেধকের মত কাজ করে।
শুধু মন ভালো রাখতেই নয় শরীরের জন্যেও প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আপনার মনকে সজাগ রাখবে। এবং অবসাদগ্রস্ত অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
এরপরের অবস্থানে রয়েছে টমেটো। এই টমেটোতে রয়েছে আলফা লিপোলিক অ্যাসিড এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। যা ডিপ্রেশন কাটাতে অত্যন্ত জরুরি।
- লাফিং থেরাপি
নাম শুনে হয়তো বুঝে গেছেন লাফিং থেরাপি কি। এটি হচ্ছে মূলত হাসির মাধ্যমে চিকিৎসা করা। মনো বিজ্ঞানীগণ বলেন আশিক হচ্ছে সব রোগের ওষুধ।
কারণ কিছু বিশেষ পরীক্ষার দ্বারা প্রমানিত হাসি আমাদের ইউনিটি’ বুস্ট করে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কমায় এবং ভয় বা উদ্বেগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। যে কোনো স্টেজের ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে হাসি বা লাফিং থেরাপি সবচেয়ে সহজ ও উপকারী ন্যাচারাল ট্রিটমেন্ট ও কম খরচ সাপেক্ষ।
- ক্যাডলিং থেরাপি
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে জড়িয়ে ধরা আবার কি ধরনের থেরাপি। হ্যা, জড়িয়ে ধরা একটি বিশেষ ধরণের চিকিৎসা। এটি এন্ড্রোপিনস হরমোন কে এক্টিভ করে। যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি ডিপ্রেসন কমাতে কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
- প্রার্থনা করা
আমাদের প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় উপায় গুলো দেওয়া রয়েছে। অর্থাৎ একজন ডিপ্রেশন গ্রস্ত মানুষের জন্য একটি মাত্র ধর্মগ্রন্থ যথেষ্ট। ধর্মগ্রন্থগুলো আধ্যাত্মিকভাবে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় । তাছাড়া নিয়মিত প্রার্থনা আপনার মনের উপর জমে থাকা ডিপ্রেশন গুলোকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়। আপনি যখন সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি যাবেন তখন বুঝতে পারবেন যে আপনার ভালোবাসা সবথেকে বেশি সৃষ্টিকর্তার প্রতি থাকা উচিত। একজন মানুষ যখন ডিপ্রেশনে থাকে তখন প্রায় সব ধরনের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। আর বিশ্বাসের প্রধান উৎস হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা।
- ডিপ্রেশনে থাকার কুফল
ডিপ্রেশন বর্তমানে আমাদের সমাজে একটি চরম মানসিক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত । এর প্রধান কারণ হচ্ছে এই ডিপ্রেশনের শিকার হয় প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ আত্মহত্যার মত জঘন্য সিদ্ধান্ত নিতে দুইবার ভাবছে না। এই ডিপ্রেশনের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে মৃত্যু।ডিপ্রেশন থেকে বহু জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অনিদ্রা, ব্লাড প্রেশার, ক্যান্সার ইত্যাদি। ডিপ্রেশন যে শুধু মানুষের উপর প্রভাব ফেলে তাও বলা যায় না কারণ এটি আমাদের সমাজের অপরাধপ্রবণতা গুলোকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের তরুণ সমাজের অনেকেই মনে করে নেশা করার মাধ্যমেই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আসলে এটি চরম ভুল কথা কারণ এটি সামরিক মনে প্রশান্তি দিল ডিপ্রেশনকে আরো দীর্ঘ সময় স্থায়ী করে।মানুষ সচারাচর আবেগপ্রবণ। অন্যের বাহবা মানুষকে যেমন উৎফুল্ল করে ঠিক তেমনি অন্যের তিরস্কার আমাদের মানসিকভাবে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়। প্রকৃতির নিয়মই মানুষ যখন সচরাচর নিজে থেকে অন্যকে এগিয়ে থাকতে দেখে তখন অবশ্যই মনের মধ্যে একটি চাপ সৃষ্টি হয়, এবং চাপটি বেশি দিন স্থায়ী হলে এটি চরম ডিপ্রেশনে রূপ নিতে পারে।
- ডিপ্রেশনের কারণ
তবে ডিপ্রেশন শুধু অসফলতা থেকে আসেনা। নিজের কাছের কাউকে হঠাৎ করে হারিয়ে ফেললে মানুষ ডিপ্রেশনের শিকার হয় মানুষ । আপনাকে যখন কেউ খুব কাছ থেকে আগলে রাখে হঠাৎ করে সে যখন আপনার জীবন থেকে চলে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে আপনি ভেঙে পড়বেন। তবে একটা কথা মনে রাখা উচিত যে নিজেই নিজের সবথেকে পরম বন্ধু। কাউকে চিরকাল নিজের কাছে রেখে দেওয়া যায় না। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সবাই প্রস্থান করে।
আরও পড়ুনঃ
- ডিপ্রেশনের লক্ষণ:
ডিপ্রেশনের লক্ষণ গুলো জানা খুবই জরুরী কারণ এর ফলে হয়তো আপনার খুব কাছের মানুষটিকে রক্ষা করতে পারেন আত্মহত্যার মত মারাত্মক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে। আপনি যে ডিপ্রেশনে আছেন এটা বুঝার সহজ উপায় হচ্ছে আপনার কোন কাজ করতে ভাল লাগবেনা। এমনকি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে মন বসবে না। সবসময় নিজেকে উদাসীন বলে মনে হবে এবং বুকের ভিতর চাপা একটি ভয় কাজ করে। একজন ডিপ্রেশন গ্রস্ত মানুষ দিনের বেশিরভাগ সময় আনমনা থাকে। সব সময় কিছু না কিছু ভাবতে থাকে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে তারা নিজের খেয়াল রাখা ছেড়ে দে। পরবর্তীতে তারা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়।
তাছাড়া আরেকটি সমস্যা দেখা দেয় ডিপ্রেশনের কারণে। সেটি হচ্ছে অনিদ্রা। অর্থাৎ ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা।
এটুকুই ছিলো ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় আমাদের আজকের আলোচনা। সর্বশেষ একটি কথা না বললেই নয়। জীবন কখনও মসৃণ সোজা রাস্তা গুলোর মত হয়না। জীবন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় চেয়েও অনেক কঠিন। অর্থাৎ জীবনে উথাঁন পতন থাকবেই। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন আপনি ছাড়া কেউ কষ্টের মুহুর্ত গুলো পাড় করেনি। তাহলে আপনি সম্পূর্ন রূপে ভুল। আপনি নিজের চোখে না দেখলেও সবাই জীবনের চরম মুহুর্ত গুলোর শিকার হয়েছে কখনো না কখনো।