আপনারা হয়তোজানেনএখন যুগহলো ডিজিটাল-এর এবং আপনি যদি এখনো না জানেন যে,ডিজিটাল মার্কেটিং কি? তাহলে হয়তো আপনি অনেক পিছনে পড়ে আছেন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপারে জেনে নেওয়াটা আপনার জন্য অনেক জরুরী। আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যাপারে ধারণা অর্জন করা আপনার ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপারে ধারণা রাখেন তাহলে নিজের ব্যবসা কে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আর যদি আপনি আপনার বিজনেসের জলদি সফলতা পেতে চান তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং আপনার সফলতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সেইদিন এখন নেই যেখানে আমরা কোন প্রডাক্ট মার্কেটিং করার জন্য মানুষের ঘরে ঘরে বা দোকানে দোকানে যেতাম। এগুলো মার্কেটিং এর পুরনো নিয়ম যেগুলি আজ আর কাজে আসে না বললে, ভুল হবে না। এই প্রক্রিয়া গুলিতে সময় অনেক নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে আপনার টাকাও অনেক খরচ করতে হয়। এর বাইরে এই পুরনো মার্কেটিং এর প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা আমাদের প্রডাক্ট বা সার্ভিস অধিক লোকেদের কাছে প্রচার বা মার্কেটিং করতে পারি না। এখানেই কাজে আসে ডিজিটাল মার্কেটিং এর। ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে এমন একটি শক্তি যার দ্বারা আমরা যে কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ঘরে বসেই কিছু সময়ের মধ্যে লক্ষ্য লক্ষ্য লোকেদের কাছে মার্কেটিং বা প্রচার করতে পারি।
এককথায় ডিজিটাল মার্কেটিং হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা সমূহ গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো।
আগের কার দিনে কোন কোম্পানি তাদের পণ্যসমূহ কে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন মার্কেটারদের নিয়োগ দিতেন। তারা গ্রাহক পর্যায়ে গিয়ে উক্ত পণ্যের গুণাগুণ গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতেন এবং গ্রাহকদের কে তা কিনার জন্য উৎসাহিত করতেন। বর্তমানে সেই কাজটি তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেট এর কল্যানে অনলাইনে করা যায়, যাকে বলে ডিজিটাল মার্কেটিং।
ডিজিটাল মার্কেটিং আমরা কেন করব
ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীতে সবথেকে চাহিদা সম্পন্ন জব সেক্টর গুলোর মধ্যে অন্যতম। যতই দিন যাচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদা হু হু করে বেড়ে চলছে। আমাদের দেশে খুব কম মানুষই এই পেশায় সক্রিয় তাই এর জব পাওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ হবে। আপনিও চাইলে দুই এক মাস ট্রেনিং নিয়ে কাজে লেগে যেতে পারেন। যতই দিন যাচ্ছে মানুষ ততই সামাজিক মাধ্যম গুলোতে সক্রিয় হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই যদি লাইফ টাইম ইনকাম জেনারেট করা যায় তাহলে ক্ষতি কি। কোম্পানি বা বিজনেস ওনাররা অনেক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের প্রোডাক্ট সার্ভিস ইন্টারনেট এর দ্বারা মার্কেটিং করতে পারেন। এগুলোর মধ্যে যে প্রক্রিয়া গুলো অন্যতম সেগুলো হচ্ছে –
১. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন গুগল সার্চ এর মাধ্যমে কিছু সার্চ করি তখন প্রথম তিন থেকে পাঁচটি সমাধান বা সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টের মধ্যে আপনি বিজ্ঞাপন দেখবেন। বিজ্ঞাপনগুলি সাধারন ভাবেই দেয়া থাকে এবং তার আগে অ্যাড বলে লেখা থাকে। বিভিন্ন কোম্পানি বা বিজনেস ওনাররা গুগোল অ্যাড ওয়ার্ড দ্বারা গুগল সার্চ ইঞ্জিন বা অন্য অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে এভাবে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর দ্বারা যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মার্কেটিং প্রচার বা গ্রাহক খোজার চেষ্টা করাকেই সার্চ ইঞ্জিন মারকেটিং বলে।
২. সোসিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং
সোসিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং হল এমন একটি মার্কেটিং এর উপায় যেখানে বিভিন্ন অনলাইন সোসিয়াল মিডিয়া ওয়েবসাইট যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-এর ব্যবহার করে ব্র্যান্ড প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করা হয়। এখন সব ধরনের গ্রাহক বা ভোক্তা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ স্কুলে পড়া স্টুডেন্ট থেকে রিটায়ার্ড করা বয়স্ক লোক অব্দি সোসিয়াল মিডিয়া ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। তাই বিভিন্ন কোম্পানিরা সোসিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং এর দ্বারা তাদের পণ্যের ক্যাটাগরি হিসেবে অনেক সহজে গ্রাহক পেয়ে থাকেন।
৩. ইমেইল মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন একটি ভাগ বা মাধ্যম যেখানে কোন পণ্য , ব্র্যান্ড বা সার্ভিসের মার্কেটিং বা প্রচার ইমেইলের মাধ্যমে করা হয়। সাধারনত আমরা যেভাবে ইমেইল করি সেটা ইমেইল মার্কেটিং নয়। এখানে যে সার্ভিস , প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ড আপনি প্রচার করতে চাচ্ছেন সেটার বিষয়ে ভালো করে মেসেজ লিখতে হয়। তারপর সেই মেসেজ ইমেইল এর মাধ্যমে হাজার হাজার লোকেদের ইমেইল আইডিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে আপনি যেকোন জিনিস বা পণ্যের প্রচার বা প্রমোশন হাজার হাজার লোকের কাছে একই সাথে একটি ইমেইল এর মাধ্যমে করতে পারবেন। আজ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটাররা ইমেইল মার্কেটিংয়ের প্রচুর ব্যবহার করছেন এবং সার্ভিস বা প্রোডাক্টের প্রমোশন করছেন।
৪. ভিডিও মার্কেটিং
ইউটিউব এ চ্যানেল বানিয়ে তাতে নিজের বিজনেস ব্র্যান্ডের ব্যাপারে ভিডিও বানিয়ে আজ অনেক কোম্পানি বিজনেস ওউনাররা ভিডিও এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসার প্রচার বা প্রমোশন করছেন। আপনি ইউটিউব এ গিয়ে যে কোন কোম্পানির বিষয়ে সার্চ করে দেখলে আপনি তাদের অফিশিয়াল প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। ইউটিউব হচ্ছে গুগল সার্চের পর দ্বিতীয় সবথেকে বড় সার্চ ইঞ্জিন। যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোকেরা ভিডিও দেখতে আসেন। তাই যে কোন জিনিসের বা পণ্যের প্রমোশন করার জন্য ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করাটা অনেক লাভজনক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিভিন্ন কোম্পানিরা কমিশনের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট বা ব্লগে তাদের ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং প্রমোশন করেন। আপনার যদি একটি ব্লগ বা ওয়েব সাইট থাকে তাহলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি এর দ্বারা টাকা আয় কিভাবে করবেন এর ব্যাপারে অবশ্যই জেনে নেবেন।
৬. ব্লগ বা ওয়েবসাইট দ্বারা মার্কেটিং
আজ আপনি সব ধরনের কোম্পানির একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট অবশ্যই পাবেন। এর কারণ হলো আজ লোকেরা সব ধরনের ছোট বড় প্রশ্নের উত্তর ইন্টারনেটে সার্চ করেন। এখন আপনি যদি নিজের কোম্পানির বিজনেস বা প্রোডাক্টের সাথে জড়িত প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানিয়ে আর্টিকেল এর মাধ্যমে লোকেদের কাছে তুলে ধরেন তাহলে সেই ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটর আপনার ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট প্রমোশন করার অনেক ভাল মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। এর বাইরে ওয়েবসাইট বা ব্লগের মাধ্যমে যেকোনো জিনিস প্রডাক্ট সার্ভিস বা কোম্পানির ব্যাপারে লোকেরা ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং কোথায় শিখবেন
আপনি অনলাইনে কিছুদিন ঘাটাঘাটি করার পর ডিজিটাল মার্কেটিং এর সম্পর্কে আরও অনেক সাধারণ ধারণা অর্জন করতে পারবেন। তারপর ইউটিউব কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু ফ্রি ডিজিটাল মার্কেটিং টিউটোরিয়াল পাওয়া যায় সেগুলো ফলো করতে পারবেন। ইংরেজিতে দক্ষতা ভালো থাকলে বিভিন্ন বিদেশি ওয়েবসাইট গুলোতে বিনামূল্যে অনেক কোর্স পাওয়া যায় সেগুলো থেকে আপনি সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে এখন বাংলাতেও অনেক ডিজিটাল মার্কেটাররা কোর্স করিয়া থাকেন।মনে রাখবেন পরিপূর্ণ ডিজিটাল মার্কেটর হিসেবে জব সেক্টরে জব পাওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই একজন সাকসেসফুল ডিজিটাল মার্কেটর এর সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সবথেকে ভালো হয় অনলাইনে অনেক পেইড কোর্স পাওয়া যায় সেখান থেকে যে কোন একটি কোর্স এনরল করলে। তাহলে আপনি তাদের সাপোর্ট পাবেন যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কি কি সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে
একাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষকে আকৃষ্ট করার সক্ষমতা আপনি যত মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারবেন আপনার প্রোডাক্ট বা পণ্য ততো বিক্রি হবে। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একজন কাস্টমারকে কিভাবে এঙ্গেজ করা যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করতে হবে। আপনার চিন্তাশীল মনন এবং কনটেন্ট রাইটিং এর উপর পাবলিক এংগেজমেন্ট বৃদ্ধি পাবে। তাই কনটেন্ট রাইটিং এর উপর আপনাকে ফোকাস হতে হবে।
কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবেন
ডিজিটাল মার্কেটিং মূলত একটি বিশাল বড় সেক্টর আপনি রাতারাতি এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। অবশ্যই আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। কনটেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং ,ভিডিও মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ব্লগ সাইট বা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, ভাইরাল মার্কেটিং ইত্যাদি হল ডিজিটাল মার্কেটিং এর এক একটি ক্ষেত্র। আপনি যেকোনো একটি ক্ষেত্র বেছে নিয়ে কাজে লেগে যেতে পারেন। একসাথে সবগুলো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে যাবেন না এতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে তবে ভালো মানের ডিজিটাল মার্কেটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনাকে সবগুলো মার্কেটিং সেক্টর সম্পর্কে অবশ্যই মোটামুটি ধারণা অর্জন করতে হবে।