আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটি শুধুমাত্র আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডই না বরং এটি একটি কমপ্লিট স্যুট অফ গেজেট। স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপস গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। এমনও অনেক অ্যাপস আছে যেগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আপনার পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল দুটি জীবনকে খুব সুন্দর ভাবে আলাদা করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। এমন কিছু উপকারী অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে আজকে আমরা কথা বলবো।
আরও পড়ুন ঃ
তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক অ্যাপস গুলো সম্পর্কে –
১. English & Bangla Dictionary
আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন ইংলিশ শব্দের বাংলা অর্থ জানার প্রয়োজন হয়ে উঠে আবার অনেক সময় বাংলা শব্দের ইংরেজি শব্দগুলো বের করতে হয়। এই অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি এই দুটি কাজ খুব সহজেই করতে পারবেন। শুধু আপনার যে শব্দটির অর্থ জানা প্রয়োজন সেটি সার্চ করলে মুহূর্তেই আপনাকে অ্যাপটি তা জানিয়ে দিবে।
২. Alarmy ( sleep if you can)
নাম পড়েই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এটার কাজ কি! সঠিক সময়ে ঘুম থেকে না উঠতে পারার কারণে অনেক সময় অনেক কাজেই আমাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। ইউনিভার্সিটি তে যাওয়া, কলেজে যাওয়া বা অফিসে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন দরকারি কাজে যাওয়ার জন্য আমাদের সঠিক সময়ে সকাল সকাল উঠতে হয়। স্মার্টফোনে বিল্ডিং–এ যে এলার্ম সফটওয়্যার টি দেয়া থাকে সেটা খুব একটা বেশি ইফেক্টিভ না। তাই এই অ্যাপটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠার ক্ষেত্রে। এটা খুবই বিরক্তকর এলার্মিং অ্যাপ যেটা ব্যবহার করলে আপনি ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য। এটা আপনি ব্যবহার করতে পারেন যদি প্রায়ই আপনার সঠিক সময় উঠে কাজে যেতে হয়।
৩. LastPass
এটি একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি রেজিস্ট্রেশন করলে সেখানে আপনার ডিফারেন্ট ইউজার নেম ডিফরেন্ট পাসওয়ার্ড হয়তো আপনি ব্যবহার করে থাকেন এবং লগইন করতে গিয়ে দেখা যায় প্রায়ই সেগুলো মনে থাকে না। এই অ্যাপটি আপনাকে সহায়তা করবে সেই সকল ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড গুলো মনে রাখতে। এই অ্যাপ সিকিউর ভাবে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে রাখবে এবং আপনি যখনই কোনো সাইটে লগইন করতে যাবেন এই অ্যাপটি আপনাকে সাজেশন দিয়ে দিবে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড কি ছিল সেই বিষয়ে। আপনি তখন শুধু লগইন এ ক্লিক করলেই সাথে সাথে লগইন হয়ে যাবেন।
৪. PicsArt photo studio
এটি একটি ইমেজ এডিটিং অ্যাপ। আমরা প্রায়ই স্পেশাল মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে চাই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাইডিফল্ট আপনার ফোন দিয়ে আপনি যখন কোন ছবি ইমেজ তুলবেন সেটা এতোটা এট্রাক্টটেড থাকেনা কিন্তু এ ধরনের একটি ফটো এডিটিং অ্যাপ ইউজ করে আপনার সেই অর্ডিনারি পিকচার টিকে আপনি এক্সট্রা অর্ডিনারি করে তুলতে পারেন। এই অ্যাপটির মধ্যে অনেকগুলো বিল্ড ইন ফিল্টার আছে সেগুলো ব্যবহার করে আপনার ইমেজে আপনি কালার গ্রেটিং যুক্ত করতে পারেন। এছাড়া আরো অনেক ফিচার রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার একটি সাধারণ ছবিকে প্রফেশনাল করে তুলতে পারবেন। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি গুলো শেয়ার করার ফিচারস ও দেয়া আছে।
৫. Unified remote
অ্যাপটি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনটিকে আপনি রিমোটে কনভার্ট করতে পারবেন এবং আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর সাথে কানেক্ট করে ফেলতে পারবেন। কম্পিউটারের যে বেসিক গুলো টাস্ক গুলো আছে সেগুলো আপনি স্মার্টফোনের মাধ্যমে কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেমন বিভিন্ন মিউজিক ফাইল ওপেন করা , ক্লোজ করা , প্লে–পুশ, অন অথবা অফ করা এই কাজগুলো আপনি অ্যাপটির মাধ্যমে করতে পারবেন। আপনার স্মার্ট ফোন থাকা আপনার ফোনের ব্লুটুথ ফিচারটি ব্যবহার করে এই অ্যাপটি কাজ করে থাকে।
৬. Evernote
বিভিন্ন বিষয়ের উপরে আপনি নোট করে রাখতে পারবেন এই অ্যাপে। আমরা প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে ভুলে যাই। যেমন আপনি বাজার করতে গেছেন অনেকগুলো আইটেম আনতে হবে কিন্তু আপনি ভুলে গেছেন অথবা অফিসে অনেক কাজের চাপে পরে মাঝে কিছু কাজ করতে ভুলে গেছেন। প্রতিদিন আপনার টুকটাক পার্সোনাল বা প্রফেশনাল সকল কাজ এই অ্যাপটিতে নোট করে রাখলে আপনি এই ভুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন খুব সহজে এবং সকল কাজ খুব সুন্দর ও পরিপাটিভাবে করতে পারবেন।
৭. Slack
এটি একটি কলাবরেশন অ্যাপ। প্রায়ই আমাদেরকে টিম ওয়াইজ বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করতে হয়। আপনি ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট হলে দেখবেন টিচাররা বিভিন্ন টিমকে দায়িত্ব দেয় প্রোজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য। যেটা টিম ওয়াইজ কমপ্লিট করতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে গেলেও সেখানে বিভিন্ন টিম বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কাজ করে থাকে।
আপনি যদি এমন একটি টিমকে মেন্টেন করতে চান তাহলে এই অ্যাপটি দাঁড়া খুব সহজে করতে পারবেন। টিমের প্রগ্রেস কতটুকু হলো, কারো কোন সমস্যা আছে কিনা, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনশট দেয়া, ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করা অর্থাৎ একটি টিমের সাথে কাজ করার জন্য যে কমিউনিকেশন করা প্রয়োজন এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি তা খুব সহজে করতে পারবেন। আপনি চাইলে কাজটি ফোনেও করতে পারবেন স্কাইপ এও করতে পারবেন কিন্তু প্রসেস গুলো এখনো এতটা কার্যকরী না তাই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্লেক এর মাধ্যমে খুব সুন্দর ও সহজ ভাবে টিমকে মেইনটেইন করতে পারবেন।
৮. Habit tracker
এটি একটি প্রডাক্টিভিটি অ্যাপ। আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু ভালো অভ্যাস এবং কিছু খারাপ অভ্যাস থাকে। যত বেশি ভাল কাজ আপনি আপনার জীবনের যুক্ত করতে পারবেন আপনার ভবিষ্যতের জন্য তা ততই ভালো হবে। এটা আমাদের সবার জানা থাকা সত্ত্বেও তা ঠিকমতো পালন করি না।প্রতিদিন যে ২৪ ঘন্টা সময় থাকে তার কতটুকু ভালো কাজে ব্যয় করছেন যা আপনার ভবিষ্যতে আপনি কাজে লাগাতে পারবেন এবং কতটুকু আপনি নষ্ট করছেন যা আপনার জীবনে কোনো মূল্যই নেই ? তাই এই অ্যাপটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন আপনার হ্যাবিট গুলোকে ট্রেক করার জন্য।
আপনার অভ্যাস অন্য কেউ বদলাতে পারবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি নিজে না চাইবেন। আর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিজে নিজে ট্রেক করা। আমরা অনেক সময় অন্যের আশায় বসে থাকি যে আর একজন এসে আমাকে প্রেসার দিয়ে কাজগুলো করিয়ে নেবে। আর এজন্য আমাদের আর এই কাজগুলো করা হয় না। কারণ প্রত্যেকেই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত কারো জন্য কারো সময় নেই। আপনার জীবন ও আপনার অভ্যাসগুলোকে আপনার ট্রেক করতে হবে। নিজেকে প্রেসার দিতে হবে। এভাবে আপনি একটি সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারবেন।
এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি দৈনিক বিভিন্ন ধরনের গোল সেট করতে পারবেন বা রুটিন সেট করতে পারবেন। যেমন আজকে আমি দুই ঘন্টা ওয়ার্ক আউট করবো, একটা বইয়ের এত সংখ্যক পৃষ্ঠা পর্ব। এই সকল ছোট ছোট গোল আপনি এই অ্যাপের মাধ্যমে সেট করে রাখতে পারেন এবং আজকের দিনে কাজগুলো আপনি করে ফেলতে পারলে আজকের দিনে আপনি সাকসেস।
৯. Walli – 4k, HD wallpaper
এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনার ফোনের প্রেজেন্টেশনকে আপনি চেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন। বিভিন্ন এইচডি কোয়ালিটির ফিচারস, পিকচারস, ব্যাকগ্রাউন্ড ,স্মার্টফোনের থিম ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনের যে ইন্টার্নাল লুকটি থাকে আপনি আপনার মন মত তা বদলে ফেলতে পারবেন।
১০.Xender-share music & transfer files
এটি একটি ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ। আমাদের বিভিন্ন ফাইল শেয়ার এর প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ক্লাসের নোট, বিভিন্ন ছবি, ভিডিও আদান–প্রদান করতে হয়।এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই কাজগুলো করতে পারবেন। ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই এর ফাইল ট্রান্সফারের যে স্পিড থাকে সেটা থেকে কয়েক গুণ বেশি স্পিড আপনি এই অ্যাপটির মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।
১১. Uber & Pathao
এই দুটি অ্যাপ রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। এই অ্যাপ গুলো কে ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন কার হায়ার করতে পারবেন বা বিভিন্ন বাইক হায়ার করতে পারবেন যাতায়াতের জন্য বর্তমানে এই অ্যাপ গুলো অনেক পপুলার। শহরের দিকে প্রচুর জ্যাম জট থাকে। তখন কাঙ্ক্ষিত যাতায়াতের বাহনগুলো পাওয়া যায় না। ওই সময় গুলোতে এই অ্যাপ গুলো দিয়ে খুব সহজেই আপনি ট্রান্সপরটেশনের সুবিধা পেতে পারেন। আপনি যেকোন সময় এই অ্যাপ গুলো থেকে রাইডারদের কল করতে পারবেন এবং তারা এসে আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে
১২. Mx Player
এটি একটি মিউজিক প্লেয়ার। আমরা সবাই কমবেশি মিউজিক পছন্দ করি ইসলামিক ব্যাকগ্রাউন্ড এর হলে আপনি হয়তো প্রায়ই ওয়াজ শুনে থাকেন। স্মার্টফোনে একটি বিল্ডি ইন এম পি থ্রী প্লেয়ার দেয়া থাকে কিন্তু এই থার্ড পার্টি এম পি থ্রী প্লেয়ার গুলোতে এক্সট্রা অনেক ফিচার থাকে এবং তার সাথে সাথে সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক ভাল হয়। তাই মিউজিক প্লেয়ার এর জন্য আপনি অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন।
১৩. Vidmate app
ভিডমেট অ্যাপ হল অনলাইন থেকে ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য সবচেয় জনপ্রিয় । আমরা সবাই জানি, কোন সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউব থেকে কোন ভিডিও সরাসরি ডাউনলোড করা যায় না। কিন্তু এই অ্যাপ দিয়ে আপনি যেকোন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সহজেে ডাউনলোড করতে পারবেন। এবং ভিডমেট অ্যাপের ডাউনলোড স্পীড অনেক দ্রততম।