সৌন্দর্য মানুষের ভূষণ। তবে এই সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দে আপনার বাহারি চুলগুলো। তবে তবে এটি কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন যখন আপনার এসব চুলগুলি অকালে ঝরে পড়ে। তবে সাধারণত চুল সবারই পরে। কারণ মানুষের যেমন বয়স থাকে চুলেরও তেমন একটা বয়স থাকে। বলা হয়ে থাকে চুলের বয়স সীমা হচ্ছে ১১১০ দিন। আর মানুষের গড়ে প্রায় এক লক্ষের মত চুল রয়েছে যা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টি চুল গজায় এবং সম পরিমাণে ঝরে পড়তে পারে। তবে চুল অনেক সময় অস্বাভাবিক ভাবে ঝরে পড়ে যা রোধ করা প্রয়োজন চুল পড়া রোধে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা রয়েছে। তাছাড়া খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে চুল পড়া রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। তবে বেশ কিছু ক্লিনিক্যাল শ্যাম্পু রয়েছে যেগুলো অনেকে চুল পড়া রোধে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা আজকের এই টপিকসে আলোচনা করব কি কি উপায়ে চুল পড়া রোধ করা যায় এবং চুল পড়ার কারণ গুলো।
আরও পড়ুনঃ
চুল পড়ার কারনঃ
চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া না হলে বা বংশগতভাবে চুল ঝরে পড়ে। অর্থাৎ চুল পড়ার সমস্যা টা অনেকের বংশগত ভাবে থাকে। আগে শুধু ছেলেদের বংশগতভাবে চুল পড়লেও বর্তমানে প্রায় 50 শতাংশ নারী বংশগতভাবে চুল পড়ে। আমরা যারা শহরে থাকি তারা যেসব পানি ব্যবহার করে তানোরে থেকে সাপ্লাই করা। সাপ্লাই করা পানিতে ক্লোরিন থাকে যা চুল পড়ার আরেকটি কারণ। আবার ভাষার পানির ট্যাংকে যদি বিচিং পাউডার থাকে তাহলে চুল পড়ে যাওয়া সহ মাথার স্কিনের ডিজিজ দেখা দিতে পারে । আবার অনেকে প্রেগনেন্সি কে চুল পড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে আসলে প্রেগনেন্সির সাথে চুল পড়ার কোনো সংযোগ নেই। প্রেগনেন্সির সময় হরমোনাল কিছু পরিবর্তনের কারণে সামান্য সময়ের জন্য চুল পড়া দেখা দেয়। বর্ষার মৌসুমে চুলকে বেশি যত্নে রাখতে হয় কারণ তখন আবহাওয়া আর্দ্র থাকে। অর্থাৎ চুল সব সময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে হবে।
চুল পড়া রোধে ঘরোয়া চিকিৎসা
চুল পড়া রোধে অনেক কার্যকরী কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জাম গুলো হচ্ছে ঘরের প্রাত্যহিক ব্যবহার্য জিনিস পত্র । চুল পড়া রোধে ঘরোয়া ভাবে তৈরি কয়েকটি প্যাক ব্যবহার করা যায় যা অনেক কার্যকর। ঘৃতকুমারী, আমলকি , শিককাই ও নিমের গুড়ো একি পরিমাণে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে চুলে ব্যবহার করা যায়। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে এটি বেশি কার্যকর। এরপর আরেকটি প্যাক রয়েছে যেখানে ডিম, মেথির গুঁড়া এবং টক দই মেশানো হয়। অনেকের চুল পড়া রোধে গরম তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেয়, অর্থাৎ গরম তেলের মেসাজ চুল পড়া রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই মেসেজ এর ফলে চুলের গোড়ায় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় ফলে চুল তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ পায়। এছাড়া ঘরে বসে চুল পড়া রোধে আরো একটি কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সেটি হচ্ছে পেঁয়াজের রস ব্যবহার। পেঁয়াজে উচ্চমাত্রায় সালফার থাকে। যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, সেই সাথে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ মাথাকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এরপর আরেকটি ফল চুল পড়া রোধে কি ব্যবহার করা হয়। সেটি হচ্ছে আমলকি। আমলকি চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং এটি নারকেল তেলের সাথে একসাথে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। নিমপাতার পেস্টও এক্ষেত্রে কার্যকর। আমরা যে প্রতিদিন চা পান করে। এই চা কেও চুল পড়া বন্ধ করতে ব্যাবহার করা যায়। তবে সাধারন চা নয়। সবুজ চা ব্যাবহার করা হয়। এই চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ চুল পড়া বন্ধ এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চুল পড়া রোধে খাবার
হেয়ারফল কমাতে খাদ্যভ্যাস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ আপনার শরীরে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর অভাব থাকলে বা পুষ্টির অভাব থাকলে চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি আসে রক্তনালীর মাধ্যমে। ধূমপানের ফলে চুলের জন্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহের রক্তনালিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ ধূমপানের ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়। বর্তমান যুগে চুল পড়ার সমস্যা অনেকগুণ বেড়ে গেছে কারণ অতীতের তুলনায় বর্তমানে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে চুল পড়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ফাস্টফুড। কারণ ফাস্টফুডে রয়েছে প্রচুর ফ্যাট এবং সুগার। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়ার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। চুলের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে। যেগুলো চুলকে স্বাস্থবান রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই ভিটামিন ডি এর মধ্যে অন্যতম দুইটি। তাই খাবারের তালিকায় ভিটামিন বি এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার রাখাই উত্তম। সুষম খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন সকালের নাস্তার তালিকা দুধ ডিম এবং কলা এ তিনটি খাবার রাখা জরুরী । কারণ এ তিনটি খাবার চুলের জন্য অনেক উপকারী। এরপর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার চুল পড়া রোধে কার্যকর। এবং খাবারের তালিকায় সামুদ্রিক মাছ এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার রাখাও উচিত।
চুল পড়া রোধে শ্যাম্পু
ডাক্তাররা অনেক সময় অনেক ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহারের কথা বলেন। তবে সাধারন শ্যাম্পুগুলি ঘনঘন ব্যবহার করলে চুল পড়ার সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে শ্যাম্পু অ্যালকালিক বা ক্ষার দিয়ে তৈরি এবং চুল প্রোটিনে তৈরি। ক্ষার এবং প্রোটিন এর সংস্পর্শে প্রোটিন ভেঙে যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুলের সামনের অংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্লিনিক্যাল শ্যাম্পু গুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার উচিত নয়। এমনি সাধারণ শ্যাম্পু গুলোর মধ্যে কতগুলো ব্যাবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি হল লরিয়াল প্যারিস ,সানসিল্ক, ডাভ, ক্লিনিক প্লাস প্রভৃতি।
চুলের যত্ন
চুলের সঠিক যত্ন চুলকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে। তবে অনেকে চুলের যত্ন মানে মাথায় জেল, আয়রন করা, কালারিং করা ইত্যাদিকে মনে করে। তবে আসলেই এগুলো চুলের কোন যত্নই নেয় না উল্টো চুলের ক্ষতি করে থাকে। তবে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য সাধারণভাবে তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুলের প্রটেক্টর হিসেবে কাজ করে।অর্থাৎ দেওয়ালের রং যেমন দেওয়াল কে রক্ষা করে তেমনই তেলও চুলের রক্ষা করে। তবে তেলের ক্ষেত্রে নারিকেল তেল সব চেয়ে ভালো হয়। কারণ এতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। যার ফলে চুল ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের আক্রমন থেকে সুরক্ষিত থাকে। রোজমেরি ল্যাভেন্ডার তেল ও চুলের জন্য অনেক উপকারী।এটিতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা চুল পড়া রোধে কার্যকরী। এতে আমলকী , নারিকেল, জলপাই, এবং জোজোবার মত উপাদান । এটি চুল গজাতেও সাহায্য করে।এরপর আপনি যেই নিয়মিত শ্যাম্পুটি ব্যাবহার করছেন তাতে বীটরুট নির্যাস, এবং তেতুলের বীজ আছে নাকি লক্ষ করুন।এটি মাথার তালু পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। শ্যাম্পু ব্যবহারে আরেকটি সতর্কতা হচ্ছে এটি শুকনো চুলে ব্যাবহার না করায় উত্তম। অর্থাৎ শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল দেওয়া উচিত। আর শ্যাম্পু সাথে সাথে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। এটি চুলকে মসৃণ, উজ্জ্বল, এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
চুলের যত্নে কতিপয় ভুল ধারণা
অনেকে মনে করেন গরম পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে ভালোভাবে পরিষ্কার হয়। আসলে এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। গরম পানি মাথার তালুর জন্যে ক্ষতিকর। তবে কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করা উপযোগী। আমার চুলের জন্য গরম বাতাস ক্ষতিকর।
প্রথম দিক থেকে চুলের সঠিক যত্ন নিলে চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত হতে হয় না। সবার উচিত চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া।